twitterfacebookgoogle pluslinkedinrss feedemail

Friday, July 11, 2014

রাজপুত্র ও রাজকন্যে





ডাইনি বুড়ির ষড়যন্ত্র শেষ পর্যন্ত সফল হলো না। অনেক অনেক কাল আগে এক দেশে এক ডাইনি রাজত্ব করত। তার ছিল অনেক ক্ষমতা। সে যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারত জাদুর বলে। হিংসুটে এই ডাইনি মানুষের সুখ-শান্তি দেখলেই জ্বলে-পুড়ে মরত। হয়েছে কী, এক ছিল রাজপুত্র। আর ছিল এক রাজকন্যে। পাশাপাশি দুই রাজ্যে তাদের বসবাস। দু’জনের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। বেশি দিন বাকি নেই বিয়ের। ডাইনি ওদের বিয়ের খবর পেয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তার লোক লাগানো আছে। কোথায় কী ঘটছে, ওরা সব খবরই কুচুটে বুড়িটাকে জানায়। মানুষের কোনো ভালো খবর শুনলেই হলো। তার মাথায় রক্ত চড়ে যায়। সে ঠিক
করলএই ছেলেমেয়ে দুটিকে সে ঘোল খাইয়ে ছাড়বে। এমন শাস্তি দেবে যে সেটা ওরা কোনোদিনই ভুলতে পারবে না
একদিন সে রাজপুত্রের ঘরে গিয়ে হাজির। বিশ্রী বোঁটকা এক রকমের গন্ধ বেরুচ্ছে ডাইনির গা থেকে। রাজপুত্র অবাক। কোত্থেকে এই আপদ এসে হাজির হয়েছেহাজার ভেবে-চিন্তেও এ রহস্যের কূল-কিনারা করতে পারল না সে। ডাইনি হিস হিস করে বলে,
এ্যাই ব্যাটাহাঁ করে দেখছিস কীচল আমার সঙ্গে। তোকে একটু ঘোলা পানি খাইয়ে আনি
রাজপুত্র একথা শুনে চটে গেল ভীষণ। রেগে মেগে বলল,
তোমার সাহস তো কম নয়। জানোতুমি কার সঙ্গে কথা বলছোতলোয়ারের এক কোপে তোমার মুণ্ডুটা নামিয়ে দেব ঘাড় থেকে। এক মিনিটও লাগবে না তাতে
ডাইনির চোখ টকটকে লাল। নাক-মুখ দিয়ে যেন আগুনের হল্কা বের হচ্ছে। রাগে গরগর করতে করতে সে বলে,
এক্ষুণি মজা দেখাচ্ছি তোকে। আমাকে চিনিসযতই চেষ্টা করিস না কেনআমার এক চুল ক্ষতিও করতে পারবি না তুই
রাজপুত্র কোমরে গোঁজা তলোয়ারে হাত দিতে যাবেএমন সময়ে ঘটে অদ্ভুত এক ঘটনা এ কি কাণ্ড! তার হাত চলছে না। কেমন যেন নিথর ও অবশ হয়ে আসছে
ডাইনি এই ফাঁকে তার ঝোলা থেকে একটা মানুষের বিদঘুটে মাথার খুলি বের করে মন্ত্র আওড়ায়। জাদুর কাঠি ওই খুলিটাতে ছুঁইয়ে বলে ওঠে,
তুই একটা শেয়াল হয়ে যা। এক্ষুণি। এক মুহূর্তও দেরি না
তা-ই হয়। মুহূর্তের মধ্যে ফুটফুটে রাজপুত্র একটা কদাকার শেয়ালে পরিণত হয়। ডাইনি ওই শেয়ালের গলায় শক্ত একটা দড়ি বেঁধে নেয়
তারপর অদৃশ্য হয়ে যায়
ঘন জঙ্গলের ভেতরে একটা দুর্গযেখানে ডাইনি বুড়ির আস্তানা। ওখানে নিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখে শেয়ালটাকে। তারপর ডাইনি রওনা হয় রাজকুমারীকে ধরে আনার জন্য
একই কায়দায় রাজকুমারীকে ধরে আনে সে। একই দিন। রাজকন্যেকে রাখা হয় আলাদা একটা ঘরে
তাকে দেওয়া হয়েছে ব্যাঙের চেহারা। রাজকন্যে নরম সরম মানুষ। ডাইনিকে কোনো বাধা সে দিতে পারেনি। সে তো আর রাজপুত্রের মতো তলোয়ার চালাতে পারে না চোখের পলকে কী থেকে কী হয়ে গেল। দুর্গন্ধে ভরা পচা একটা চৌবাচ্চায় ব্যাঙটাকে ছুঁড়ে দেয় ডাইনি। একটা পা শক্ত সুতো দিয়ে বেঁধে রাখতে ভোলে না বলা যায় নালাফাতে লাফাতে ব্যাঙটা যদি চম্পট দেয়

২.
দিন যায়। রাত যায়। ধীরে ধীরে সময় পার হতে থাকে। বেশ কয়েক দিন পর ঘটল আরেক ঘটনা। সেই ঘটনা শেয়াল ও ব্যাঙের জীবনে নিয়ে আসে চমত্কার পরিবর্তন। আর ডাইনির জন্যসেটা জানতে হলে এই গল্পের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আমাদের
বিটকেলে দেখতে ডাইনির মন হিংসায় ভরপুর। তার জ্বালায় কারও শান্তিতে থাকার জো নেই। ওই দেশেই বাস করেন এক জাদুকর। তার মনটা খুব ভালো। দয়ালু স্বভাবের মানুষ তিনি। সবার মঙ্গল কামনা করেন তিনি সব সময়। তিনি এক দিন ধ্যান করতে বসে দেখলেন ঘন জঙ্গলে এক দুর্গ। সেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছে রাজপুত্র ও রাজকন্যেকে। না খেতে পেয়ে দুজনই রোগা ও দুবল হয়ে পড়েছে। ওদের চেনাই যায় না শরীর এমনই কাহিল
জাদুকর ঠিক করলেনওদের যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি মুক্ত করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ একটা ড্রাগনকে তিনি পাঠিয়ে দিলেন দুর্গের উদ্দেশে। এই ড্রাগনটা অসম্ভব কাজের। ঝটপট কাজ সেরে ফেলতে ওস্তাদ। মাত্র কয়েক মুহূর্ত সময়। ড্রাগন গিয়ে হাজির সেই দুর্গে। তার প্রথম কাজ হলো : ডাইনিটাকে উচিত শিক্ষা দেয়া। তার পরের কাজ বন্দিদের উদ্ধার করা। ডাইনিকে নাস্তানাবুদ করতে বেশি সময় লাগল না ড্রাগনের। কারণতার ক্ষমতার কাছে ডাইনির কোনো জারিজুরি খাটে না
ড্রাগন তার মুখ থেকে গরম নিঃশ্বাস ছাড়ে। নিঃশ্বাস মানে জ্বলন্ত আগুন। যে সামনে পড়েমুহূর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তারপর ড্রাগন মুক্ত করল রাজকুমার ও রাজকন্যেকে
কিছুদিন পর মহা ধুমধাম করে তাদের বিয়ে হলো। রাজপুত্ররাজকন্যে ভালো মানুষ জাদুকরের কাছে ভীষণ কৃতজ্ঞ। কারণতার চেষ্টাতেই দুজন মুক্তি পেয়েছে প্রাণে বেঁচে ফিরে আসতে পেরেছে যার যার বাবা-মায়ের কাছে। জাদুকর ওদের না বাঁচালে জঙ্গলের সেই দুর্গ থেকে কারওই ফেরা হতো না। কোনোদিনই না। ডাইনির হাতেই বেঘোরে প্রাণ হারাতে হতো
আরও কিছুদিন পর রাজপুত্র রাজা হলো। সেই জাদুকরকে প্রধান উজির হিসেবে নিয়োগ করল নতুন রাজা। এমন বিশ্বস্ত লোক তো দুনিয়ায় খুব সহজে পাওয়া যায় না
(লেবাননের রূপকথা)


সূত্রঃ আমারদেশ

No comments:

Post a Comment